শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়: বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকট, ভারতের সামনে বড় প্রশ্ন

শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়: ঢাকা-দিল্লির সম্পর্ক, রাজনীতির অস্থিরতা এবং ভবিষ্যতের বড় প্রশ্ন

শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়
শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়

বহুদিন পর বাংলাদেশ আবার একটি বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে—আর এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে ঢাকাজুড়ে তৈরি হয়েছে অস্বস্তিকর উত্তেজনা।

রায় ঘোষণার মুহূর্তে আদালতকক্ষ গমগম করতে থাকে, কেউ তালি দিচ্ছে, কেউ স্লোগান তুলছে। পুরো প্রক্রিয়া সরাসরি দেখানো হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। একই সঙ্গে বাইরে কঠোর নিরাপত্তা, রাস্তায় সেনা মোতায়েন—সব মিলিয়ে রায়ের গুরুত্ব ও আলোড়ন দুটোই স্পষ্ট।

কেন এই রায় এত বড় ঘটনা

শুধু মৃত্যুদণ্ড নয়, যে আদালত রায় দিল সেটি নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। কারণ—ট্রাইব্যুনালটি প্রথম গঠন করেছিলেন হাসিনা নিজেই, ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধের মামলাগুলোর বিচার করতে। একই ট্রাইব্যুনাল এখন তাঁকেই দোষী সাব্যস্ত করল।

হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগের তালিকা ছোট নয়। তদন্ত অনুযায়ী—

  • ২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলির নির্দেশ
  • অপহরণ ও গুম
  • দমন-পীড়ন
  • মানবাধিকার লঙ্ঘন
  • অসংখ্য নিহতের দায় তাঁর ওপর

৮৪ জন সাক্ষী, ভিডিও-অডিও প্রমাণ, হাসপাতালে মৃতদেহের রেকর্ড—সব মিলিয়ে শুনানিটা কয়েক মাস ধরে চলেছে। আদালত শেষ পর্যন্ত বলেছে, “সব অভিযোগের একটাই সাজা—মৃত্যুদণ্ড।”

হাসিনা অবশ্য দাবি করেছেন, এটি “অবৈধ ও অনির্বাচিত” সরকারের প্রতিহিংসা ছাড়া আর কিছু নয়।

ভারতের সামনে কঠিন প্রশ্ন

হাসিনা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকার ইতিমধ্যেই তাকে ফেরত চেয়েছে। দিল্লি এখনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি, তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে ভারত তাঁকে পাঠিয়ে দেবে—এমন সম্ভাবনা খুবই কম।

বাংলাদেশে এরই মধ্যে ভারতবিরোধী মনোভাব বাড়ছে। পাকিস্তানও এই সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছে। দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক যতটা স্থির ছিল, এখন ততটাই অনিশ্চিত।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে অস্থিরতার ছায়া

মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশে গণতন্ত্র নিয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

  • নির্বাচন কবে হবে কেউ জানে না
  • সাংবাদিকদের ওপর চাপ বেড়েছে
  • বিরোধীদের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা বাড়ছে
  • অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়ছে

একসময় যে বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার উদীয়মান অর্থনৈতিক গল্প বলা হতো, এখন সেই দেশের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।

আওয়ামী লীগের অবস্থান

আওয়ামী লীগ রায়কে সরাসরি "রাজনৈতিক প্রতিহিংসা" বলে দাবি করছে। তাদের বক্তব্য—২০২৪ সালের আগে দেশ উন্নয়নের দ্রুতগতিতে এগোচ্ছিল, আর এখন দেশ পিছিয়ে যাচ্ছে।

দলের মতে, ষড়যন্ত্র ও বিদেশি সমর্থিত রাজনৈতিক চালবাজির শিকার হচ্ছে বাংলাদেশ। দলের অনেক নেতা-কর্মী বলছেন, "এটি শুধু হাসিনার বিরুদ্ধে রায় নয়, আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াই।"

রায়ের পেছনে কী কৌশল

এই রায়কে অনেকেই আরেকভাবে দেখছেন। দেশে অনিশ্চয়তা, নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা, অর্থনৈতিক চাপ—এসবের মধ্যে এমন একটি নাটকীয় রায় জনগণের মনোযোগ সরানোর কৌশল হতে পারে।

ইউনূস সরকার ক্ষমতায় এসেছে “স্থিরতা ফিরিয়ে আনা”র প্রতিশ্রুতি দিয়ে। কিন্তু গত এক বছরে সেই স্থিরতার বদলে অস্থিরতার মাত্রাই বেড়েছে।

এখান থেকে বাংলাদেশ কোথায় যাবে

শেখ হাসিনার আমলেও নিশ্চয় সমস্যা ছিল—গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ ছিল, বিরোধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি সেই চক্রটিকে আরও গভীর করছে।

প্রশ্নগুলো তাই অনেক:

  • বাংলাদেশ কি আবার গণতান্ত্রিক পথে ফিরতে পারবে?
  • প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক কি আরও খারাপ হবে?
  • তরুণরা যে পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেছিল, সেই স্বপ্ন কি এখন ভাঙছে?
  • আর সবচেয়ে বড় কথা—এই রায় কি সত্যের কাছে, নাকি ক্ষমতার কাছে?

নজর এখন দিল্লির দিকেও। ভারত কী সিদ্ধান্ত নেয়—তা পুরো অঞ্চলের রাজনীতি বদলে দিতে পারে।


Post a Comment

Previous Post Next Post